মশার কয়েল ব্যবহার করছেন তাহলে ধুয়ার ক্ষতিকর দিকটা জেনে নিন
কয়েলের ধোয়া আপনার জন্য ক্ষতিকরমশার অত্যাচার থেকে বাঁচতে আমরা সবাই কয়েল ব্যবহার করে থাকি। অনেকে আবার বেশি ধোঁয়া হয় এমন কয়েল ব্যবহার করে থাকেন।কিন্তু আপনি জানেন কি? একটা মশার কয়েল থেকে যে পরিমাণ ধোঁয়া বের হয় তা ১০০টা সিগারেটের সমান ক্ষতিকর। সাধারণত কয়েলের সঙ্গে এলেথ্রিনের ব্যবহার পারমিটেড। অথচ সর্বোচ্চ কী পরিমাণ এলেথ্রিন ব্যবহার করা হয়েছে তার উল্লেখ থাকে না। এলেথ্রিন থাকলেও তা সাবধানতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।বৃদ্ধদের জন্যও এটা দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করা ক্ষতিকর। সাধারণভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দীর্ঘক্ষণ কয়েল ব্যবহার করা ঠিক নয়। এটা শ্বাস-প্রশ্বাস, কিডনি ও লিভারের জন্য ক্ষতিকর।
এছাড়া কয়েলের ক্ষতিকর প্রভাবে গলা শুকিয়ে যাওয়া, মাথা ঘুরানো, বমিবমি ভাব, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, দম বন্ধ হয়ে আসার অনুভূতি হতে পারে।কয়েল তৈরিতে যে কাঠের গুঁড়ো ও নারকেলের মালার গুঁড়ো ব্যবহার করা হয়, তার ধোঁয়া এতোই সূক্ষ্ম যে তা সহজেই আমাদের শ্বাসনালী ও ফুসফুসের বায়ুথলির মধ্যে পৌঁছে সেখানে জমা হতে পারে। আর খুব সূক্ষ্ম হওয়ার জন্য কণাগুলো বাতাসেও কয়েকদিন ভাসমান অবস্থায় থাকে। অর্থাৎ, মশার কয়েল নেভার বহুক্ষণ পরেও ঘরে অবস্থানকারী মানুষের শ্বাসনালীতে কয়েলের ধোঁয়ার কণা ঢুকতে পারে। এর ফলে ফুসফুসের বায়ুথলির কণায় রক্ত জমে যাওয়া থেকে নানা ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে আপনার যদি শ্বাসকষ্ট বা এলার্জির সমস্যা থাকে ।
মশার কয়েল ব্যবহার করছেন? তাহলে এখনই সাবধান হোন:
বাংলাদেশের বাজারে প্রচলিত ২৪টি ব্র্যান্ডের মশার কয়েল রয়েছে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এর মধ্যে ২০টি ব্র্যান্ডের কয়েলে ক্ষতিকর উচ্চমাত্রার রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশের বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদন নেই। গবেষণায় কয়েলের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) নির্ধারিত সর্বোচ্চ দশমিক শূন্য ৩ মাত্রার (এই মাত্রা মশা তাড়াতে কার্যকর, কিন্তু মরবে না) অধিক সক্রিয় রাসায়নিক উপাদান (অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট) পাওয়া গেছে। এসব কয়েলের ধোঁয়ায় মশা, তেলাপোকাসহ কীটপতঙ্গ মারা পড়ছে। অথচ কয়েল কোম্পানিগুলোর মোড়কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদিত মাত্রারই উল্লেখ আছে।
মালয়েশিয়ার চেস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গবেষণায় দেখা গেছে, একটা মশার কয়েল থেকে যে পরিমাণ ধোঁয়া বের হয় তা একশ’টা সিগারেটের সমান ক্ষতিকর। অনেকেই জানেই না একটা মশার কয়েল একশ’টা সিগারেটের সমান ফুসফুসে ক্ষতি করছে।
বর্তমান বাজারে যেসব নিম্নমানের বিভিন্ন বিদেশী কয়েল পাওয়া যাচ্ছে তার অধিকাংশই আমদানি হচ্ছে চীন থেকে। এ নিত্য ব্যবহার্য মশার কয়েল বিএসটিআই বাধ্যতামূলক তালিকায়ও রয়েছে। তা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত তদারকির অভাবে বাজারে বিক্রি হচ্ছে নিম্নমানের বিভিন্ন কয়েল।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এসব কয়েল ব্যবহারের ফলে ক্যানসার, শ্বাসনালিতে প্রদাহসহ বিকলাঙ্গতার মতো ভয়াবহ রোগ, এমনকি গর্ভের শিশুর ক্ষতি হতে পারে। লিভার-কিডনি বিকল হওয়া, ত্বকে চুলকানি, অ্যালার্জিসহ নানা চর্মরোগ হতে পারে।
এছাড়াও অনেক সময় দেখা যায় কয়েলের ধোঁয়ায় অনেকের চোখ জ্বালা করে। এটা চোখের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর। এর কারণ হল কয়েলে এক ধরণের কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয় যার নাম pyrethrum। চোখ জ্বালা করা ছাড়াও বমিভাব, মাথাব্যথাও করতে দেখা যায়।
মশার কয়েল তৈরীতে কিছু কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিকর কেমিক্যাল S-2 ব্যবহার করেন যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং এটি ফুসফুসের ক্যানসার সৃষ্টিকারী। এটির কারণেই অনেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
এবার ভেবে দেখুন, মশা মারতে গিয়ে কীভাবে নিজের অজান্তেই মুত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন ধীরে ধীরে। তাই মশার কয়েল ব্যবহারে সাবধানী হোন। যদি ব্যবহার করতেই হয় তবে বদ্ধ ঘরে নয়, বরং প্রচুর বাতাস চলাচল করে এমন ঘরে কয়েল রাখা শ্রেয়। দরজা জানলা বদ্ধ থাকলে খুলে দিন।</p?