বাসার আসবাবপত্রের যত্ন নেওয়ার পদ্ধতি
বাসা-বাড়ি সাজাতে কাঠের আসবাবপত্রের জুড়ি নেই। এসব কাঠের জিনিস বাড়িয়ে দেয় ঘরের আভিজাত্য। স্টিলের আসবাবপত্রের প্রচলন শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কাঠেরগুলোই সেরা। কাঠের টেবিল, চেয়ার, শেলফ, আলমারি, সোফাসেট, পালঙ্কের সৌন্দর্যই যেন আলাদা। কাঠের আসবাবপত্রের যত্নের জন্য নিয়মিত শুকনা কাপড় দিয়ে তা ঘষে ঘষে মোছা উচিত। কাঠের আসবাবপত্রের যত্ন নেয়ার কিছু পদ্ধতি নিচে দেওয়া হলো-
আসবাবপত্রের দৈনিক যত্নে : কাঠের আসবাবপত্রের ওপর ধুলো জমতে না দেওয়াই ভাল। তা নিয়মিত শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন৷ সপ্তাহে একদিন খুব হালকা কোনও লিকুইড ডিটারজেন্ট আর হালকা গরম পানির একটা মিশ্রণ তৈরি করুন। একটা পাতলা ও পরিষ্কার তোয়ালে এই মিশ্রণে ডুবিয়ে ভালো করে নিংড়ে পানিটা ফেলে দিন। তারপর তা দিয়ে আলতো করে আসবাব ঘষে ঘষে মুছে নিন। মনে রাখবেন, এই কাপড়টি আর্দ্র হওয়া প্রয়োজনীয়, ভেজা হওয়ার দরকার নেই৷ এরপর অন্য একটা শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে শুষে নিন ভেজা ভাবটা। খেয়াল রাখতে হবে পানি যেন আসবাবপত্রে জমে না থাকে।
অ্যান্টিক আসবাবপত্রের যত্ন : অ্যান্টিক আসবাবপত্রের পালিশ ওঠে গেলে দেখতে খুব বাজে লাগে। কিন্তু তার পুরনো ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনা মোটেই তেমন কঠিন কাজ না। এক মগ পানি গরম করে নিন। তার মধ্যে কড়া ফ্লেভারের টি ব্যাগ ডুবিয়ে রাখুন। চা হালকা গরম হয়ে এলে টি ব্যাগ তুলে ফেলে দিন৷ এবার এর মধ্যে নরম ও পরিষ্কার একটি কাপড় ডুবিয়ে তুলে নিয়ে নিংড়ে বের করে নিন সমস্ত জলীয় ভাব। তারপর সেটা দিয়ে মুছুন আপনার অ্যান্টিক আসবাবপত্র।
আসবাবপত্র থেকে পানির দাগ তোলার উপায় : অসাবধানে চায়ের কাপ বা সফট ড্রিঙ্কের বোতল উলটে গিয়েছে কাঠের টেবিলের উপর? দাগের জায়গাটায় টুথপেস্ট লাগান। তারপর একটা নরম কাপড় দিয়ে ঘষে ঘষে দাগটা তুলে ফেলুন। টুথপেস্টটা মোছার জন্য পরে আবার একটা ভেজা রুমাল বা তোয়ালে ব্যবহার করতে হবে।
কঠিন দাগ তোলার পদ্ধতি : এক টেবিলচামচ বেকিং সোডা আর পানি দিয়ে একটা মিশ্রণ তৈরি করুন। দাগের ওপর এটা লাগিয়ে নিন। তারপর নরম কাপড়ে মুছে দাগটা তুলে ফেলুন। এইবার একটা ভেজা কাপড়ের উপর বুলিয়ে নিন। তারপর একটা শুকনা কাপড়ে মুছে ভেজা ভাবটা শুষে নেবেন।
বাড়িতেই বানিয়ে নিন পালিশ: এক কাপ অলিভ অয়েল আর চার ভাগের এক কাপ সাদা ভিনেগার একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। আসবাবপত্র পরিষ্কার করে নেয়ার পর এই মিশ্রণ একটা নরম কাপড়ে ঢেলে ভালো করে মুছে নিন। আপনার ফার্নিচার ঝকঝকে তকতকে থাকবে বহুদিন।
ফার্নিচারের যত্ন:
ফার্নিচার মানুষের রুচির পরিচয় বহন করে। এজন্য অনেকে খুব দামি ফার্নিচার কিনে থাকেন। তবে শুধু এগুলো কিনে রাখলেই হবে না, ঠিকমতো যত্নও নিতে হবে। তা না হলে দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে পারবেন না। দামি ফার্নিচার দ্রুত নষ্ট হওয়া মানে অনেক অর্থ অপচয়। এজন্য নিয়মিত যত্ন নিতে হবে। তাহলেই আপনার শখের আসবাবটি অনেকদিন টিকবে। যেভাবে ফার্নিচারের যত্ন নেবেন-
১. ঘরের যে অংশটিতে বেশি রোদ পড়ে সেখানে কখনও কাঠের আসবাব রাখবেন না। বছরে অন্তত একবার ফার্নিচার পলিশ করুন। ডাইনিং টেবিলে কখনোই গরম জিনিস রাখবেন না। টেবিল ক্লথ ব্যবহার করুন।
২. নিয়মিত শুকনো ও নরম কাপড় দিয়ে কাঠের আসবাব পরিস্কার করুন। ভালো করে খেয়াল রাখুন, আসবাবের খাঁজে ধুলো যেন জমে না থাকে। এক্ষেত্রে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারও ব্যবহার করতে পারেন। তবে ভেজা কাপড় দিয়ে মুছবেন না। এতে আসবাবের ওপর দাগ পড়তে পারে ।
৩. আসবাবের পোকামাকড়ের উপদ্রব ঠেকাতে নিমের তেল স্প্রে করতে পারেন। মাঝে মাঝে আসবাবের ডেকোরেশন পরিবর্তন করুন। কাঠের আসবাব এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরানোর সময় খেয়াল রাখুন ফার্নিচারের জয়েন্ট পয়েন্টগুলো ঠিক আছে কি না।
খাঁজকাটা আসবাব ধুলামুক্ত রাখার কৌশল:
ধুলার প্রভাব মাঝে মাাঝে এত বেশি থাকে যে দরজা, জানালা বন্ধ রেখেও খুব একটা লাভ হচ্ছে না। সুযোগ পেলেই বাড়ির আসবাবের ওপর এসে লেগে থাকে। সমস্যা হয়ে যায় যখন সাজানোর উপকরণ বা আসবাবে থাকে খাঁজকাটা নকশা। কারুকাজের ভেতর ভেতর ধুলা জমে যায়। প্রতিদিন হয়তো ওপর ওপর মোছা হয়, কিন্তু ভেতরে-ভেতরে ময়লা জমতে থাকে।
তাই প্রতিদিন স্বাভাবিক নিয়মে কাপড় দিয়ে আসবাব পরিষ্কার করার সময় খাঁজকাটা নকশার জায়গাগুলো ব্রাশের সাহায্যে পরিষ্কার করে ফেলুন। কয়েক দিন বিরতি দিলেই এসব খাঁজে ধুলা-ময়লা জমে যায়। জমে যাওয়া ধুলা-ময়লা পরিষ্কার করতে গেলে ঝক্কি বাড়ে। জমে থাকা ময়লার কারণে ঘরের সৌন্দর্যহানি ঘটে, আবার তা স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাড়ায়। বড় বড় খাঁজের নকশা করা আসবাবের জন্য বড় ব্রাশ আর খুদে নকশার জন্য ছোট ব্রাশ প্রয়োজন। ছোট ব্রাশ হিসেবে পুরোনো টুথব্রাশও কাজে লাগাতে পারেন।
কাঠ–বাঁশ–বেত : কাঠের আসবাব পরিষ্কারের সময় পানি লাগাবেন না। এতে বার্নিশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। নিয়মিত শুকনা কাপড় ও ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করলে বার্নিশের চকচকে ভাবটা দীর্ঘদিন পর্যন্ত থাকে। অন্যথায় সহজেই ধুলা জমে যায় কাঠের খাঁজে। ধুলা জমে গেলে তা পরিষ্কার করার জন্য ব্রাশ পানিতে ভিজিয়ে নেয়ার পর পানি ঝেড়ে নিতে পারেন। এরপর ভেজা ব্রাশ দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করে ফেলুন। পানির কারণে কাঠের সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে ধুলা জমে থাকাটা স্বাস্থ্যকর নয়। বাঁশ-বেতের খাঁজ পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো পরিষ্কারক দ্রব্য ব্যবহার করবেন না।
ধাতব সামগ্রী : নকশাদার ধাতব সামগ্রী ঐতিহ্যের পরিচায়ক। খাঁজকাটা এসব ধাতব জিনিসের জন্য একটু বাড়তি যত্ন প্রয়োজন। দুই সপ্তাহ অন্তর কিংবা নিদেনপক্ষে মাসে একবার আলাদাভাবে একটু সময় দিন এসব সামগ্রীর যত্নে। উপাদানভেদে যত্নের ধরনটা অবশ্য কিছুটা আলাদা। লোহার সামগ্রীর নকশাকাটা অংশ তেল ও ব্রাশের সাহায্যে পরিষ্কার করুন। নারকেল তেল কিংবা সর্ষের তেল ব্যবহার করা যায়। পরিষ্কার করা হয়ে গেলে শুকনা কাপড় বা টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে ফেলুন। খাঁজের অংশগুলোতে তেল লেগে থাকতে পারে। এগুলো ভালোভাবে মুছতে হবে। এসবে কখনো পানি লাগাবেন না।
পিতল, তামা বা কাঁসার সামগ্রী পরিষ্কার করতে লেবু বা তেঁতুলের রস ও পানির মিশ্রণে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। ব্রাশের সাহায্যে খাঁজের অংশগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এ সময়টাতেও খাঁজের অংশগুলোর দিকে বাড়তি খেয়াল রাখা প্রয়োজন। ধোয়ার পর কাপড় দিয়ে মুছে নিন।
কাচ–পাথরের যত্ন : কাচের নকশাদার সামগ্রী দুই সপ্তাহ পর ডিটারজেন্টের সাহায্যে পরিষ্কার করুন। না পারলে মাসে অন্তত একবার সময় বের করতে চেষ্টা করুন। কাচের জিনিসটি ডিটারজেন্ট পানিতে পরিষ্কার করার পর পানি দিয়ে আবার পরিষ্কার করুন। ছোট আকারের জিনিস হলে ডিটারজেন্ট মেশানো পানিতে কিছুক্ষণ চুবিয়ে রাখতে পারেন। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কাচ পরিষ্কারের জন্য বিশেষ ধরনের স্প্রে কিনতে পাওয়া যায়। ডিটারজেন্টের পরিবর্তে এ ধরনের স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। তবে খাঁজের অংশগুলো পরিষ্কার করতে সঙ্গে ব্রাশও চাই। পাথরের নকশা করা জিনিস পরিষ্কার করার সময় বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। এমন সামগ্রী পরিষ্কার করার সময় তেল বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার না করাই ভালো বরং শুকনা ব্রাশের সাহায্যে সাবধানে পরিষ্কার করুন।
আরো কিছু : যেকোনো কিছু পরিষ্কার করার পর খেয়াল রাখুন, যেন পরিষ্কারক দ্রব্যটি লেগে না থাকে। বিশেষ করে খাঁজকাটা অংশগুলোর ব্যাপারে সচেতনতা প্রয়োজন। আসবাবের নকশাদার অংশগুলো পরিষ্কার করার সময় এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের দিকে কাপড় বা ব্রাশ টেনে নেবার সময় খেয়াল করুন, শেষ প্রান্তে সব ময়লা যেন আটকে না থাকে। খাঁজের এক প্রান্তে ময়লা জমে থাকলে আবার ব্রাশের সাহায্যে পরিষ্কার করে নিন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো (যেমন ব্রাশ, কাপড় প্রভৃতি) একসঙ্গে সংরক্ষণ করুন। এতে পরিষ্কার করার সময় এসব জিনিস খুঁজতে বাড়তি সময় ব্যয় হবে না।
তথ্য এবং ছবি : গুগল